Vande Bharat Express ইঞ্জিন ছাড়া কিভাবে চলে

Vande Bharat Express লঞ্চ হয়ে গেলো হাওড়া থেকে নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত। যেই যাত্রাটা করতে ১০ ঘন্টা থেকে ১১ ঘন্টা Time লেগে যেত সেই যাত্রাটা বন্দেভারত এক্সপ্রেস এ উঠলে ৭ ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়।
এই ট্রেন সম্পর্কে অনেক প্রতিবেদন হয়তো আপনারা পড়েছেন।যেমন: এই ট্রেনের টিকেট কিভাবে কাটতে হয়, সিট কেমন, খাবার-দাবার কেমন, ইত্যাদি।
কিন্তু আজকে আমরা এই প্রতিবেদনে বন্দেভারত এক্সপ্রেস এর টেকনিকেল কিছু কথা বলব। আচ্ছা আপনি কি জানেন? বন্দেভারত এক্সপ্রেস এর মধ্যে কোনো ইঞ্জিন নেই তার সত্তেও কিভাবে এটি চলছে।
ইঞ্জিন বলতে আমি লোকোমোটিভকে বুঝিয়েছি। এটা না থাকার সত্তেও Vande Bharat Express অন্যান্য ট্রেনের থেকে বেশি শক্তিশালী। লোকোমোটিভ না থাকার সত্তেও এই ট্রেনটা কিভাবে এত পাওয়া ফুল এই বিষয় গুলো নিয়ে আজকে আমরা কথা বলার চেষ্টা করব।

লোকোমোটিভ (Locomotive)
Vande Bharat Express এর মধ্যে নতুন কি আছে বা কিভাবে ট্রেনটি চলে সেটা জানার আগে আমাদের প্রথমে জানতে হবে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে।
মানে সাধারণ যেই ট্রেন গুলো সেগুলোর লোকোমোটিভ কিভাবে কাজ করে। লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন হল একটি রেল পরিবহন বাহন যা একটি ট্রেনের চলার ক্ষমতা সরবরাহ করে। এটি ট্রেনের সামনের দিকে লাগানো থাকে। যেখানে লোকোমোটিভ পাইলোট বসে এটাকে চালানোর জন্য।
লোকোমোটিভ এর মধ্যে একসাথে অনেক কিছু থাকে যেটা একটা ইউনিটের মতো কাজ করে। ইন্ডিয়াতে দুই ধরনের লোকোমোটিভ চলে একটা হলো AC এবং আপরটি হলো DC লোকোমোটিভ।
একটা ট্রেনের চলার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যেই জিনিস সেটি হলো ওভার হেডের তাঁর। রেললাইনের উপরে লাগানো তাঁর দিয়ে প্রায় 25000 ভোল্টেজ দৌড়ায়। তবে একটা লোকোমোটিভের চলার জন্য এতো তাঁরের দরকার পড়ে না।
এই ওভার হেডের তারের সাথে আরো একটা তার লাগানো থাকে যাকে Catenary wire বলা হয়। ওভার হেডের তাঁর মাঝখান থেকে যেন ঝুলে না যায় তার জন্য এই তাঁরটি লাগানো হয়। এই তারের মধ্যে কোনো কারেন্ট থাকে না। এটা শুধু কন্টাক্ট ওয়ারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য লাগানো থাকে।
এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক একটা লোকোমোটিভের মধ্যে কি কি থাকে? আবার সেই সমস্ত জিনের কাজ কি কি এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন>> বঙ্গেও ছুটবে বন্দেভারত ট্রেন
লোকোমোটিভ এর মধ্যে কি কি থাকে

লোকোমোটিভকে চালানোর জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো এর ব্যাটারি। কারণ ব্যাটারি ছাড়া এটা স্টার্ট করা যাবে না। এর উপরের দিকে সবথেকে প্রয়োজনীয় দুটি জিনিস হলো Panto graph এবং Circuit Breaker। Panto Graph টা ইলেকট্রিক কন্টাক্ট ওয়ারের সঙ্গে টাস করে যার ফলে একটা ট্রেন ইলেকট্রিকের সাপ্লায়টা পেয়ে যায়।
আর সেই সাপ্লায়টা ইলেকট্রিক ব্রেকার হয়ে ট্রেনের মধ্যে ঢুকে। সার্টিক ব্রেকারটা বাড়ির ফিউজের মতো কাজ করে। যদি কোনো ইমারজেন্সি হয় কিংবা যদি অতিরিক্ত কোনো কারেন্ট চলে আসে তাহলে সার্কিট ব্রেকারের জন্যই ফেতরে যে লোকোমোটিভ গুলো থাকে সেগুলো বেঁচে যায়।
এবার একটা লোকোমোভিভের মধ্যে থাকে ট্রন্সফরমার, রেক্টিফায়ার, ইনর্ভাটার, ব্যাটারি, কুলিং ফেন, কমপ্রেসার, ট্রেকশন মোটর।
কারেন্ট সবার প্রথমে সার্কিট ব্রেকার থেকে ট্রান্সফরর্মারে আসে। আর এই ট্রান্সফরর্মারটা স্পেপ ডাউন ট্রান্সফরর্মার হয়। যেহেতু ওভারেট তারের মধ্যে ২৫ কেবি এর হাইভোল্টেজ থাকে তাই এর সাহায্যে এই হাই ভোল্টেজ কারেন্টটাকে স্প্রেবেল করা হয়।
তারপর ট্রান্সফরর্মার থেকে কারেন্টটা চলে যায় রেক্টিফায়ারে। এখানে গিয়ে কারেন্ট টা AC কারেন্ট থেকে DC কারেন্ট হয়ে যায়। এবার যখন কারেন্টটা ডিসি হয়ে যায় তখন এটা মোটরে চলে যায়।
আর যদি এসি কারেন্ট থাকে তাহলে এটাকে ইনর্ভাটারের মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়। সব শেষে কারেন্ট যখন ট্রেকশন মোটরে চলে আসে তখন ট্রেকশন মোটর ঘুরতে থাকে এবং তার সাথে সম্পূর্ণ ট্রেনটাকে নিজের পেছনে টানতে থাকে।
ট্রেন যখন স্থির থাকে তখন প্রচুর পরিমানে টর্ক এর দরকার পরে। তাই সেই সময় ইলেকট্রিকের প্রয়োজনও বেশি হয়। কিন্তু যখন ট্রেনের স্প্রিড ধিরে ধিরে বেরে যায় তখন আসতে আসতে ইলেকট্রিকের প্রয়োজন কমে যেতে শুরু করে।
এবার এই যে লোকোমোটিভটার কথা আমি আপনাদের বললাম এই জিনিসটা Vande Bharat Express এর মধ্যে থাকে না। এই জন্য অনেকে Vande Bharat Express ট্রেনকে ইঞ্জিন Less ট্রেনও বলে থাকে। তবে ইঞ্জিন না তাকলে ট্রেন চলবে কিভাবে। এটাও একটু ভাবার বিষয়।
আরো পড়ুন>> Mobile Phone দিয়ে ইউটিউবের ভিডিও ভাইরাল
Vande Bharat Express কিভাবে চলে
আসলে Vande Bharat Express ট্রেনকে একটু স্পেশাল ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি ইলেকট্রিকেল মাল্টি ইউনিক। মাল্টিইউনিক মানে এর মধ্যে আলাদা করে ইঞ্জিন না লাগিয়ে একাধিক কোচের নিচে ট্রেকশন মোটর লাগানো আছে।
এক্ষেত্রে ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট মোটর একসাথে কাজ করে ট্রেনটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ কারণে লোকোমোটিভের তুলনায় এতে এক্সক্লোরেশন অনেক তারাতারি হয়।
যদি আপনি এই ট্রেনটাকে সাধারণ লোকোমোটিভের সাথে কম্পেয়াপর করেন তাহলে ভারতের সবথেকে শক্তিশালী পেসেনজার লোকোমোটিভ WAP-7 এর হর্স পাওয়ার ৬ হাজার ৩৫০ এইসপি।
কিন্তু Vande Bharat Express এর হর্স পাওয়া কত আপনি জানেন? চলুন ক্যালকুলেট করে দেখা যাক। এর হর্স পাওয়া কত সেটা জানার জন্য এর কোচের যে এরেন্জমেন্ট আছে সেটাকে একবার বুঝে নিতে হবে।
Total Coach = 16
Total M Coach = 8
Motor Per Coach = 4
Total Motor = 8 X 4 = 32
তাহলে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এর একটা মোটরের পাওয়ার ২৫০ কিলোওয়ার্ট। সুতরাং ২৫০ কে ৩২ দিয়ে গুন করলে পাওয়া যায় প্রায় ৮ হাজার কিলোওয়ার্ট।
এটাই হলো বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এর টোটাল পাওয়ার। আর এটাকে যদি আপনি হর্স পাওয়ারে কনভার্ট করেন তাহলে সেটা হয় ১০৭২৮ এইসপি। তাহলে ভাবুন কোথায় ৬০৫০ এইসপি আর কোথায় ১০৭২৮ এইসপি।
আরো পড়ুন>> Metrorail Ticket বা মেট্রোরেলের টিকিট কিভাবে কাটতে হবে
শেষ কথা
এই ছিলো আমাদের আজকের প্রতিবেন। এবার হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন কেন এই ট্রেনটা এত শক্তিশালী এবং কিভাবে ইঞ্জিন ছাড়া এটা চলে সেই সম্পর্কেও জানতে পরেছেন।
আপনার মূল্যবান সময় ব্যায় করে প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিয়োমিত এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে হলে আমাদের সাথেই থাকবেন।