Bishwa Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস

World Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস
তাবলীগ জামাত সমগ্র পৃথিবী জুরে বিস্তৃত একটি প্রভাবশালী ইসলামি আন্দলন। তাবলীগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন Bishwa Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমা নামে পরিচিত।
ঢাকার তুরাগ নদীর এলাকা জুরে Bishwa Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। সারা দেশের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষা মানুষ এখানে একত্রিত হয়।
এজন্য অনেকেই মনে করেন হজের পর এটি মুসলিমদের দ্বিতীয় বড় সমাবেস। বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমেই তাবলীগ জামাত সারা দেশ সহ বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা কিভাবে শুরু হয়েছিল, এবং বিশ্ব ইজতেমা কিভাবে আয়োজন করা হয় সেই নিয়ে থাকছেন আমাদের আজকের প্রতিবেদনে।
আরো পড়ুন>> পৃথিবী ধ্বংস হবে মৌমাছি ছাড়া বিস্তারিত জানুন

বিশ্ব ইজতেমা কিভাবে শুরু হয়
ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে ১৯২৬ সালে মওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির নেতৃত্বে তাবলীগ জামাত আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে সারা বিশ্বে তাবলীগ জামাত ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে প্রায় ১৮০ থেকে প্রায় ২০০টি দেশে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়াও আনোমানিক ১ কোটি ২০ লক্ষ থেকে প্রায় ৮ কোটি লোক তাবলীগের সাথে যুক্ত রয়েছে।
তাবলীগের সদস্যদের বলা হয় সাথী। এই সাথীদের একত্র করার জন্য প্রায় ইজতেমার আয়োজন করা হয়। অধিকাংশ ইজতেমাই হয় অঞ্চল বা দেশকে কেন্দ্র করে। বিশ্ব ইজতেমা শব্দটি বাংলা এবং আরবি ভাষার সমন্বেয়ে গঠিত।
আরবি ইজতেমা শব্দের অর্থ সম্মিলন বা সমাবেশ। সাধারণত প্রতি বছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সে জন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেঁছে নেওয়া হয়।
১৯৬৭ সাল থেকে এই সমাবেশ নিয়োমিত আয়োজিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের গ্রাম এবং সহর অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫৫টি দেশের তাবলীগের লোক এখানে সমাবেশ হয়।
ধারণা করা হয় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ এখানে উপস্থিত হয়। তাই একে বিশ্বের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ইসলামিক মহা সম্মেলন বলা হয়। বিপুল মানুষের উপস্থি এই বিশ্ব ইজতেমাকে আরো জন্মপ্রিয় করে তুলেছে।
আরো পড়ুন>> X-ray বা এক্সরে মেশিন কি? বিস্তারিত তথ্য
তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র
ঢাকার রমনা পার্কের পাশে অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র। ১৯৫২ সালে এই মসজিদটিকে বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ হিসেবে নির্ধারন করা হয়।
বর্তমানেও এখান থেকেই Bishwa Ijtema সকল কিছু পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে কাকরাইল মসজিদে তাবলীগের জামাত বা Bishwa Ijtema সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে চট্টগ্রামে ততকালিন হাজিক্যাম্পে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও ১৯৫৮ সালে নারায়নগঞ্জেও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনকার এই আয়োজন কেমল ইজতেমার নামেই পরিচিত ছিলো। এরপর থেকে আবার রমনায় ইজতেমা হতে থাকে।
প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে রমনার বদলে টঙ্গীর পাগারগ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ঐ বছর বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশগ্রহণ করে।
ফলে সেটি বিশ্ব ইজতেবা বা Bishwa Ijtema নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন থেকেই টঙ্গীর খোলা মাঠে ১৬০ একর জায়গা জুরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পুরো সমাবেশ স্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ।
এখানে বাশের খুটির উপর ছউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য মাঠ প্রস্তুত করা হয়। তবে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছউনি ও টিনের ব্যারার ব্যবস্তা করা হয়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাগার মুসলমাদের জন্য মাঠের বিভিন্ন স্থান ভাগ করা থাকে। সাধারণ তাবলীগে অংশগ্রহণ কারী লোকেরা সর্বউচ্চ তিনদিন আল্লাহর পথে কাটানোর নিয়োত করেন।
সেই হিসেবে তিন দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তাবলীগের সাথে যুক্ত নয় এমন মুসলমান জুম্মার নামায এবং আখেরী মুনাজাতে ইজতেমায় যোগ দেন।
ইজতেমার তৃতীয় দিনে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন শেষ হয়। তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে আখেরী মোনাজাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় না।
তবে একটি বিষয় প্রচলিত আছে যে যত বেশি লোক একসাথে দোয়া করবে তত বেশি দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যারা তাবলীগের সাথে যুক্ত নয় তারাও এত বড় বরকত লাভের আশায় আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
এজন্য আখেরি মোনাজাতের সময় আরো কয়েক লক্ষ মুসলমান টঙ্গীর আশেপাশে সমাবেশ হয়। এমনকি বাংলাদেশ প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতাসহ অনেক মানুষ এখানে সমাবেশ হয়।
আরো পড়ুন>> বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জনসমাগমগুলো
বিশ্ব ইজতেমা কিভাবে আয়োজন করা হয়
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাবলীগ জামাতের অধিকাংশই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। সেই হিসেবে এই অঞ্চলের সাথীরাই ইজতেমায় বেশি অংশগ্রহণ করে।
তবে বাংলাদেশ সাগতিক দেশ হওয়ায় গ্রাম অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সমাবেশে যোগ দেয়। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণ কারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কাকরাইল মারকাজ মসজিদ কতৃপক্ষ দুই থাপে ইজতেমা করার সিন্ধান্ত নেয়।
২০১১ সাল থেকে এই সিন্ধান্ত কার্যক্রম করে। তখন থেকে ৩ দিন আলাদা আলাদা করে মোট ছয়দিন এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
দুই ধাপে আয়োজন করার পরেও মুসল্লীদের ঢল সামাল দেওয়া মুসকিল হয়ে পড়ে। তবে পরিচালনা সুবিধার বাইরে তাবলীগ জামাতের অভ্রন্তরিন কন্দনের কারণে বিশ্ব ইজতেমায় বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রী নেতা মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এতায়াতি এবং আলমি নামে তাবলীগের দুটি পৃথক ধারা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে এই দুই ধনের তাবলীগের দন্দ সহিংসতায় পৌছে গিয়েছে। সর্বপ্রথম কাকরাইল মারকাজ মসজিদে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
২০১৮ সালে মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করার জন্য ঢাকায় আসলে তাকে ইজতেমা ময়দানে যেতে দেওয়া হয়নি। এরপর ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসে ইজতেমার পূর্ববর্তি সমাবেশে তাবলীগ জামাতের দিল্লি মারকাজ এবং দেওবন্দী মাদ্রাসা অনুসারী এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
যার ফলে পরের বছর ২০১৯ সালে Bishwa Ijtemaa বা বিশ্ব ইজতেমা বন্ধ থাকে। এরপর ২০২০ সাল থেকে তাবলীগের দুটি অনুসারি আলাদা আলাদা করে ইজতেমার আয়োজন করে আসছে।
এরপর করোনা মহামারির কারণে পরপর দুই বছর Bishwa Ijtema বন্ধ ছিলো। মত পার্থক্য থাকার কারণে তাবলীগের দুই গ্রুপ এখনো এক হতে পারেনি।
এজন্য এবছরে দুই গ্রুপ আলাদা আলাদ করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করছে। তাবলীগের এই দন্দ শুধুমাত্র একজনের পক্ষেই দূর করা সম্ভব। আর তিনি হলেন মাওলানা মহাম্মাদ সাদ কান্ধলভি।
আরো পড়ুন>> দীর্ঘ দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা
আমাদের শেষ কথা
এই ছিলো আমাদের আজকের প্রতিবেদন। আশা করি এখান থেকে আপনি Bishwa Ijtema বা বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে বা এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আপনার মূল্যবান সময় ব্যায় করে প্রতিবেদনটি দেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। নিয়োমিত এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে আমাদের এই সাইটের সাথেই থাকবেন।